বাইয়াতবদ্ধ জীবনের গুরত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

 


 

ভূমিকা-
>আল্লাহর মেহেরবানী আমরা এই হেদায়াতের পথ পেয়েছি।               

-ইন্নাকা লা তাহদি মান আহবাবতা ওলা কিন্নাল্লাহা ইয়াহদি মাই ইয়াশা (কাসাস-৫৬)

-ও মাইয়ুদ লিল ফালা তাজিদালাহু ওলিয়াম মুরশিদা (কাহাফ-১৭)

>এই রকম আরেকটি আন্দোলন খুঁজে পাওয়া কঠিন, যারা তাদের প্রত্যেকটি কথায় কুরআন ও হাদিস পেশ করে।

-ইসলামকে জানার জন্য দেখি কোন পীর ককি বলেছে কোন বুজুর্গ কি করেছে, আমি দেখেছি আল্লাহ কি বলেছে রাসুল কি করেছে (মওদুদী)

-নিসলে হুজ্জাত কাওলে ফেলে হিজে পীর, কওলে তায়ালা ফে'লে আহমদ রহ বগির (আল্লামা ইকবাল)

-নিজেদেরকে নির্ভুল মানে করার মত ভুল আমি আমার জীবনে করিনি (মাওলানা মওদুদী)

-আমাদের বিরোধীতাকারীদের উদাহরণ, 'মক্ষী কি হামলা কা পাথ্থর পর' (মওদুদী)


শপথ অর্থ কি?
আরবী শব্দ বাইয়াত > বাইয়ুন থেকে এসেছে।
বাংলায় এর অর্থ চুক্তি, অঙ্গীকার, সঙ্কল্প, ক্রয়-বিক্রয় করা, আদান-প্রদান, প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা, ঐকান্তিক সাধনা। ইংরেজিতে বলা হয় To sell, To make a contract, To offer for sell etc. Agreement, Arrangement, Business, Deal, Contact, Commercial Transaction, Bargain, Sale, Purchase etc.

পারিভাষিক অর্থে- চুক্তি, অঙ্গীকার, ব্যবসা, সম্পর্ক, যোগাযোগ, বাণিজ্যিক লেনদেন, আলোচনা-পর্যালোচনা করা, বিক্রয়, ক্রয় ইত্যাদি। আল্লাহর জমিনে দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য সংগঠনের পদ্ধতি অনুযায়ী আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টার নাম শপথ বা বাইয়াত।


শপথের ধাপসমূহ-
১. রূহ জগতে। [আল্লাসতু বি রাব্বিকুম, ক্বলু বালা]
২. বালেগ হওয়ার পর। [ইসলামের বিধিনিষেধ জানার পর মানার সিদ্ধান্ত নেয়া]
৩. সংগঠনে আসার মাধ্যমে। [সাথী, সদস্য /রুকন]


শপথের মাধ্যম-
(১) কোন ব্যক্তির কাছ থেকে যিনি শরিয়তের সকল বিষয় জানেন  এবং মানেন। (রিস্ক থাকে)
(২) কোন ইসলামী সংগঠন থেকে যা কোরআন ও সুন্নাহর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত।


কুরআন-হাদিসে বাইয়াতের উল্লেখঃ
১. বেচা-কেনা/লেনদেন অর্থে: (সূরা জুমা : ৯, সূরা আন নূর : ৩৭)
২. চুক্তি অর্থে- জান্নাতের বিনিময়ে জান-মাল উৎসর্গের চুক্তি। (সূরা আত তাওবা : ১১১)
৩. সার্বভৌম শক্তির আনুগত্যের শপথ। (সূরা আল ফাতাহ : ১০)
৪. বাইয়াত অর্থ আল্লাহর মর্জিমত চলা। (সূরা আল মোমতাহিনা : ১২)

৫. মৃত্যুর শপথ: হুদায়বিয়ায় হযরত ওসমান (রা)-এর মৃত্যুর সংবাদে মুসলমানদের অবস্থা ছিল এই, মরে যাবো তবু ওসমান হত্যার বদলা নেবো।
৬. মুতার যুদ্ধে বীরত্বের পরিচয় দিয়েছেন যায়েদ ইবনে হারেসা, জাফর ইবনে আবি তালিব, আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা।
৭. জাফর ইবনে আবি তালিব রোমান বাহিনীর অভ্যন্তর তছনছ করে দেন, ডান এবং বাম হতে দ্বিখন্ডিত, বাহু, বুক এবং মুখ দিয়ে পতাকা উত্তোলন, সারা দেহে নব্বইটি ক্ষত চিহ্ন।
৮. জিহাদের ময়দানে অটল ও অবিচল থাকা; “হযরত উমর (রা)কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল কোন বিষয়ের ওপর আপনারা সেদিন বাইয়াত গ্রহণ করেছিলেন? তিনি বললেন সবরের ওপর বাইয়াত গ্রহণ করেছিলাম। আমরা শপথ নিয়েছিলাম শত্রুপক্ষ যতই শক্তিশালী হউক না কেন আমরা জিহাদের ময়দান ত্যাগ করে চলে যাবো না।” (বুখারী)

রাসুলের যুগে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বাইয়াতঃ
১. আকাবার ১ম শপথঃ
প্রথম ৬জন পরে ১৩ জন।
হে নবী! ঈমানদার নারীরা যখন তোমার কাছে এসে আনুগত্যের শপথ করে যে, তারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, তাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, জারজ সন্তানকে স্বামীর ঔরস থেকে আপন গর্ভজাত সন্তান বলে মিথ্যা দাবী করবে না এবং ভাল কাজে তোমার অবাধ্যতা করবে না, তখন তাদের আনুগত্য গ্রহণ কর এবং তাদের জন্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল অত্যন্ত দয়ালু।’ (আল – মুমতাহিনা – ১২)
-এই শপথের পর মুসয়াব ইবনে উমাইয়ারের দাওয়াতের সাফল্য


২. আকাবার ২য় শপথঃ
নব্যুয়তের ১৩শ বছরে ৭৩ জন পুরুষ, ২জন মহিলা।
১- ভালো মন্দ সকল অবস্থায় আমার কথা শুনবে এবং মানবে। ২- সচ্ছলতা অসচ্ছলতা উভয় অবস্থায়ই ধন- সম্পদ ব্যয় করবে। ৩- সৎ কাজের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখবে। ৪- আল্লাহর পথে উঠে দাড়াবে এবং আল্লাহর ব্যাপারে কারো ভয়ভীতি প্রদর্শনে পিছিয়ে যাবেনা। ৫- তোমাদের কাছে যাওয়ার পর আমাকে সাহায্য করবে এবং নিজেদের প্রান ও সন্তানদের হেফাজতের মতোই আমার হেফাজত করবে।  এতে তোমাদের জন্যে জান্নাত রয়েছে।


৩. বাইয়াতে রিদওয়ানঃ
-৬ষ্ঠ হিজরীতে ১৪০০ সাহাবী এই শপথ নেয়।

-এই শপথের সময় রাসুল হজ্জের ইহরাম খুলে ফেলেন।
-লাকাদ রাদিয়াল্লাহু আনিল মুমিনিন (সুরা ফাতাহ- ১৮)

-এটা পরবর্তী সময়ে বিজয়ের দ্বার উন্মোচিত করে।

৪. মক্কা বিজয়ের শপথঃ

-১০ হাজার সাহাবী এ যুদ্ধে শপথ করেন।

-রাসুল সা. এই যুদ্ধে কাবায় রক্ত প্রবাহিত করা হালাল বলেছেন [লান তাদিল্লু লি আহাদিন কালবি ও লান তাদিল্লু লি আহাদিম বাদি, ওলান তাহালালি কদ্দু ও সাযাতান ইলাদ দাহার]

-রমজান মাসের রোযা ভাঙতে বলেছেন এ যুদ্ধে [হাজা ইয়াওমুল কিতাল ফা আফতারু]

শপথের গুরত্ব-
-নবীরা শপথ নিতেন (ওইয আখাজাল্লাহু মিসাকান নাবিয়্যিন; আলে ইমরান: ৮১-৮২)
-সাহাবী শপথ নিতেন (নাহানুল্লাযি বাইয়ায়ু মুহাম্মদ আলাল জিহাদু মা বাকিনা আবাদা/মান কান মুসতান্না ফাল ইয়াস তান্না বিমান কাদেম...)
-হযরত আনাস বিন নযর রা. শপথ
-সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রা. শপথ
-ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাসই হলো বাইয়াতবদ্ধতা
-সাইয়েদ বেরলভীর কাছে দুই হারামাইনের ইমামের শপথ
-তারিক বিন জিয়াদের স্পেন বিজয়ের সময় নৌকা পুড়ে দিয়ে বিজয়ের শপথ [আইয়ুহাল ইখওয়ান! আল বাহারু মিও ওরা ইকুম, ওল আদুল্লু মিন আমামাকুম ফা ইনাল মাফার]
-কবি বলেন, 'শপথ নিয়েছি খোদার পথে/জীবন প্রভাত বেলায় যে শপথ/বাইয়াতে অর্থ হলো/যদি তুমি বাইয়াত নিয়েও কাটাও তোমার সুখের জীবন।
-জান্নাত পেতে বাইয়াত (ইন্নাল্লাহাস তারা, আম হাসিবতুম; তাওবা-১১১)
-সব ফরজের বড় ফরজের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া যায় (নামাজ, রোযা, হজ্জ; হাদিস থেকে)
-সন্তুষ্টি (লাকাদ রাদিআল্লাহু)
-আল্লাহর হাতে হাতে (ইন্নাল্লাযিনা ইউ বাইয়ু)


শপথবদ্ধ জীবন কেমন হয়?
১. জীবন মারণ আল্লাহর কাছে সঁপে দেন
-ইন্নাস সালাতি ও নুসুকি
-আমি তো আমায় সঁপে দিয়েছি
-শপথ নিয়েছি খোদারই পথে প্রাণ
২. জাহেলিয়াত থেকে সম্পর্ক ছিন্ন হয়
-ইন্নি ওজ্জাহাতু
-হাসনাহেনার ঘ্রানে ভোলে না হৃদয় তার
-সাইয়েদ কুতুবের শাহাদাৎ
-আছে যার আলোকেরও সম্ভার
৩. ইসলামের প্রাথমিক দাবি মেনে চলেন
-ফরজ, ওয়াজিব, হালাল, হারাম
-পর্দা (পরিবারে, ক্লাসে, মোবাইলে, টিউশনি)
-ব্যক্তিত্ব, মোয়ামেলাত, পড়াশুনা, বাগ্মিতা
-শিবির একমাত্র ১০০% মাদকমুক্ত সংগঠন
-শিবির হারাম রিলেশনশিপকে প্রমোট করে না
-হাজরো কর্মী শিবিরে এসে কুরআন শিখেছে
-এক ওয়াক্ত নামাজ কাযাও মানোন্নয়নের অন্তরায়
৪. দ্বীন হয় তার জীবনের উদ্দেশ্য
-পৃথিবীর হাজারো কাজের ভীড়ে
-মায়ের আদর বোনের হাসি
-কত ব্যাথা গোপনে রেখে
-জীবনের সব স্বপ্নকে ওয়া
-আমিতো জানি পথ পথের দূরত্ব
-যার কাছে প্রিয় বেশি জীবন জগৎ
-একজন মুজাহিদ জীবনের
-মাওলানা>এই হচ্ছে ঐসব সাহসীদের পথ


শপথবিহীন জীবন কেমন হয়?
১. জাহেলিয়াতের মৃত্যু
-মাম মাতা ও লাইসা ফি উনুকিহি
২. উদ্দেশ্যহীন অবহেলায় জীবন কাটে
-Tomorrow and tomorrow
-Out out brief candle
-ইকতারাবা লিন্নাসি হিসাবুহুম
-ও ইযা জায়া আজালুহা লা ইয়াস তা খিরুনা
৩. দুনিয়ার ভোগ বিলাস জীবনের লক্ষ্যে পরিণত হয়
-দিবসের দিক জুড়ে চাকরির দায়
-ধন ও মান আর সম্পদ জুড়ে স্বপ্নগুলো
-আল হাকুমুত তাকাছুর
-লান তারাকু মিন জান্নাতিন ও উইয়ুন
৪. পরিণাম হিসেবে রয়েছে কঠিন শাস্তি
-হাল আদুল্লুকুম আলা তিজারা তুনজি
-ইল্লা তানফিরুহু ওইয়ু আজ্জিবুকুম
-ইল্লা তানসুরুহু ফাকাদ নাসারাল্লু ইয আখরাজা হুল্লাযিনা কাফারু

No comments:

Post a Comment

সর্বশেষ পোস্ট

যুগে যুগে ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাস

ভূমিকা: ইসলামী আন্দোলন শুধু যুগ যুগ ধরে নয়। এ আন্দোলন শতাব্দী থেকে শতাব্দী ধরে। এ আন্দোলন হাজার বছরের আন্দোলন। ঈসা আঃ এর আগমনের প্রায় ৬০০ বছ...

জনপ্রিয় পোস্ট