যুগে যুগে ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাস


ভূমিকা:

  • ইসলামী আন্দোলন শুধু যুগ যুগ ধরে নয়। এ আন্দোলন শতাব্দী থেকে শতাব্দী ধরে। এ আন্দোলন হাজার বছরের আন্দোলন।
  • ঈসা আঃ এর আগমনের প্রায় ৬০০ বছরেরও বেশি সময় পর্যন্ত আল্লাহ কোন প্রতিনিধি পাঠান নি।
  • ইব্রাহিম আঃ এর দোয়ার ফলস্রূতিতে তার তৈরি করা ময়দানে প্রেরণ করেন রাসুলুল্লাহ সঃ কে।
  • দেশে দেশে ইসলামের নামে রয়েছে অসংখ্য সংগঠন। এদের সবার উদ্দেশ্য এক, পদ্ধতি ভিন্ন ভিন্ন।
  • আদর্শের মানদন্ড হবে কুরআন ও সুন্নাহ দিয়ে (মাওলানা মওদুদী র.)
  • তাদের গ্রহণ করুন যাদের আছে ছাত্রসংগঠন, ছাত্রীসংগঠন, মহিলাসংগঠন, শ্রমিকসংগঠন, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া....(আল্লামা সাঈদী)
  • একাধিক সংগঠন হওয়ায় আমাদের সঠিক দল বেঁচে নিতে সুবিধা হয়েছে।

রাসুল সা: এর যুগ:
  • আল ইয়াওমা আকমামতু লাকুম দ্বীনাকুম
  • ইয়া আইয়ুহার রাসুল বাল্লিগু মা উনজিলা ইলাইকা মিন ক্ববলিক ফাইন লাম তাফয়ালু ফালা বাল্লগতার রিসালা
  • রাসুল তাই সাহাবীদের থেকে সাক্ষ্য নিলেন (ইন্নাকা ক্বদ বাল্লাগতার রিসালা)
  • রাসুল তাই নসিহত করলেন (ফাল ইয়ুশ শাহিদাল গয়িবা)
  • সাহাবীরা তাই আমল করলেন (২০-৩০ হাজার সাহাবীর কবর আছে মক্কা মদিনায়
  • এজন্য এ আন্দোলনের দাওয়াত পৌঁছে গেছে সূর্য উদয় থেকে সূর্যাস্তের দেশে
  • এজন্য রাসুল বিপ্লবকে ঐতিহাসিক গিবন বলেন, It was one of the memorable revulation in the history of revulations.
  • দার্শনিক বসওয়াত বলেন, Mohammad (pbuh) was only one man who supremly successful both religious & secular fairs. 

খুলাফায়ে রাশেদীনের যুগ:
  • তারই ধারাবাহিকতায় খোলাফায়ে রাশেদীনদের ৩০ বছর অতিবাহিত হয়
  • আবু বকর রাঃ এর শাসনামল (মৃত্যুর সময় বেতনের টাকা ফেরত দেয়ার ওসিয়ত করেন, নতুন কপড়ে কাপন না দেয়ার অনুরোধ করেন।)
  • ওমর রাঃ শাসনামল (রাতের বেলায় পাহারা, ছেলের বিচারের শাস্তিতেও আপোষ না করা)
  • তার আমলেই সাদ ইবরে আবি ওয়াক্কাসের নেতৃত্বে বিজয় হয় ইরান সম্রাজ্য (মাদোয়েন শহর বিজয় হয়)
  • দাস্ত তো দাস্ত হায় দারিয়া বি না ছোড় হামনে
  • উমর ইবনে আবদুল আজিজের শাসনামল (মৃত্যরে সময় তার নতুন কোন জামা ছিল না)

খেলাফাতের পতন ও কারবালার ঘটনা:
  • ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়া (তার তিনটি বদ অভ্যাস ছিল- গান বাদ্য শুনা, শরাব পান, রেশমী কাপড় পড়া)
  • ঈমাম হোসাইন রাঃ সহ ৭২ জন শহীদ হন
  • যার মধ্যে ১৮ জন ছাড়া বাকিরা আহলে বাইতের সদস্য
  • ওবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদের নেতৃত্বে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে (১০ মহররম ৬১ হিঃ)
  • একটি আয়াতের উপর ঈমার হোসাইন রাঃ জীবন দিয়েছেন, ‘‘ও মাল্লাম ইয়াহকুম বিমা আনজালাল্লাহু ফা উলাউকা হুমুল কাফিরুন/জালিমুন’’ (মায়েদা ৪৪-৪৫) 

মুসলমানদের স্পেন বিজয় ও তার পতন:
  • ৭১১ খ্রি তারিক বিন জিয়াদের নেতৃত্বে স্পেন অত্যাচারী রাজা রডারিককে পরাজিত করে।
  • আইয়ুহাল ইখওয়ান! আল বাহারু মিও ওরা ইকুম, ওল আদুল্লু মিন আমামাকুম ফা ইনাল মাফার
  • ৭০০ বছরের বেশি মুসলমানরা শাসন করে।
  • ১০৩১ খ্রি উমাইয়া শাসনের পতন হলে আল-আন্দালুস অসংখ্য রাজ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
  • ১৪৯১ সালে ফার্ডিন্যান্ড ও ইসাবেলার সম্মিলিত বাহিনীর অবরোধের শিকার হয়। 
  • ১ নভেম্বর মুহাম্মদ গ্রানাডার শাসন খ্রিস্টান অধিকারে প্রদানের চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন।
  • ১৪৯২ সালের ২ জানুয়ারি, স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুসারে স্পেনীয় সেনাবাহিনী শহরে প্রবেশ করে ও আন্দালুস রাষ্ট্রের পতন হয়।

মুহাম্মদ বিন কাসেমের সিন্ধু বিজয়:
  • ৭১১ সালের জুন মাসে ভারত মহাসাগরের তীর ঘেঁষে এগিয়ে চলেছে দুটি জাহাজ। 
  • সিন্ধু বন্দরের কাছাকাছি আসলে জাহাজগুলো জলদস্যুদের দ্বারা আক্রান্ত হয়।
  • রাজা দাহিরের সৈন্যরা মিলিত হয়ে এই কাজটি করেছিল বলে ধারণা করা হয়।
  • হাজ্জাজ এ ঘটনা জানতে পেরে আপন ভাতিজা মুহাম্মদ বিন কাসিম এবং যুবায়েরকে পাঠিয়ে দিলেন দামেস্কে খলিফা ওয়ালিদ ইবনে মালেকের দরবারে।
  • ৭১২ সালের ১২ জুন মুহাম্মদ বিন কাসিম চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেন। 
  • সিন্ধুকে বলা হতো উপমহাদেশের 'বাবুল ইসলাম' বা ইসলামের প্রবেশপথ। 
  • যদিও মুহাম্মদ বিন কাসিমের বিজিত অঞ্চল মাত্র ৫০ বছর মুসলমানদের অধিকারে ছিল।

বখতিয়ার খলজির বাংলা শাসন:
  • ১২০১ সালে মাত্র দু হাজার সৈন্য সংগ্রহ করেন ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বখতিয়ার খলজি।
  • তিনি একজন আফগান সেনাপতি ও প্রাথমিক দিল্লি সালতানাত সৈনিক জেনারেল ছিলেন 
  • প্রথম মুসলিম যে বাংলা ও বিহার জয় করেছিল। 
  • পূর্ব ভারতে তার প্রতিষ্ঠার সময় আলিমদের ইসলামী দাওয়াতের কাজ সর্বাধিক সাফল্য অর্জন হয়েছিলো
  • ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে বাংলায় সবচেয়ে বেশি মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল।

ইমাম ইবনে তাইমিয়ার আন্দোলন:
  • ইবনে তাইমিয়া (রহ.), একজন ইসলামি পন্ডিত, দার্শনিক, ধর্মতাত্ত্বিক ও যুক্তিবিদ। হিজরী সপ্তম শতাব্দীর একজন সংস্কারক। 
  • ১২৬৩ সালের ২২ জানুয়ারি (৬৬১ হিজরি) সিরিয়ার হাররান (বর্তমানে তুরস্কে) তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
  • ইমাম ইবনে তাইমিয়া ৫০০ এর অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। 
  • বিরোধীদের চক্রান্তে ইবনে তাইমিয়াকে জীবনের অনেকটা সময় কারাগারে কাটাতে হয়েছিলো। 
  • তার মৃত্যুও কারাগারের ভেতরেই হয়েছিলো। মৃত্যুর এর বছর পূর্ব থেকে ইবনে তাইমিয়াকে কলম, কালি, কাগজ সরবরাহ করা হয়নি।
  • ১৩২৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর (২২ যুলক্কাদা ৭২৮ হিজরীতে) সিরিয়ার দামেস্কের কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন।
  • তার মৃত্যুর পর প্রায় দুই লক্ষ মুসলমান তার জানাজা পড়ার জন্যে সমবেত হয়েছিলো।

উসমানীয় খেলাফাত বা অটোমান সম্রাজ্য:
  • উসমান গাজি ছিলেন উসমানীয় তুর্কিদের নেতা এবং উসমানীয় রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা (১২৯৯-১৯২২)। উসমানের সময় উসমানীয়দের রাজ্য (বেয়লিক) আকারে ছোট ছিল এবং পরবর্তীতে তা বিশাল সাম্রাজ্যে পরিণত হয়। 
  • রাজধানী: সুগুত (আনু. ১২৯৯–১৩৩১),  কনস্টান্টিনোপল (বর্তমান ইস্তাম্বুল)(১৪৫৩–১৯২২)
  • সুলতান: ১ম উসমান (১ম) থেকে ৬ষ্ঠ মুহাম্মদ (সর্বশেষ)
  • ৬২৩ বছর এই সম্রাজ্য স্থায়ী ছিল। যার আয়তন ছিল ১৮,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ছিল ২,৪০,০০০০০ জন।
  • ১৯১৪ সালের ১ম ‍বিশ্বযুদ্ধে জার্মানের পক্ষে অবস্থান, ১৯১৫ সালের রুশ সেনাবাহিনীর  আর্মেনীয় গণহত্যা ও ১৯১৬ সালের আরব বিদোহের ফলে এ সম্রাজ্যের বিভাজন ঘটে।
  • পরবর্তীতে মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের অধীনে তুর্কিরা স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়ী হয়। ১৯২২ সালের ১ নভেম্বর সালতানাত বিলুপ্ত করা হয়।

সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী ও ক্রসেড যুদ্ধ:
  • সালাহউদ্দীন আইয়ুবী ছিলেন মিশর ও সিরিয়ার প্রথম সুলতান এবং আইয়ুবীয় রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। 
  • পাশ্চাত্যে তিনি সালাদিন বলে পরিচিত। ইউরোপীয় ক্রসেডারদের বিরুদ্ধে তিনি মুসলিম প্রতিরোধের নেতৃত্ব দেন। 
  • ক্ষমতার সর্বোচ্চ শিখরে তার সালতানাতে মিশর, সিরিয়া, মেসোপটেমিয়া, হেজাজ, ইয়েমেন এবং উত্তর আফ্রিকার অন্যান্য অংশ অন্তর্ভুক্ত ছিল। 
  • আইয়ুবী সেনারা ১১৮৭ সালে হাত্তিনের যুদ্ধে ক্রুসেডারদের পরাজিত করে। ক্রসেডারদের কাছ থেকে ফিলিস্তিন জয় করে। 
  • এর ৮৮ বছর আগে ক্রুসেডাররা ফিলিস্তিন দখল করে।
  • ১১৯৩ সালের ৪ মার্চ সালাহউদ্দিন দামেস্কে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। 
  • মৃত্যুর সময় তার ব্যক্তিগত সম্পদের মধ্যে এক টুকরো স্বর্ণ ও চল্লিশ টুকরো রূপা ছিল।
  • ১৯১৭ সালে সেই জেরুজালেম তুর্কিদের থেকে ব্রিটেন এবং ১৯৪৮ সালে ইহুদীরা দখল করে ৭৬১ বছর পর। 
  • তারা আইয়ুবীর কবরের উপর পা রেখে উৎসব করে।

মুঘল সম্রাজ্যের ইতিকথা:
  • পানিপথের প্রথম যুদ্ধ ১৫২৬ খ্রিষ্টাব্দের ২১ এপ্রিল লোদি সাম্রাজ্যের ইব্রাহিম লোদি এবং মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবরের মধ্যে সংঘটিত হয়।
  • বাহাদুর শাহ জাফর  ছিলেন মুঘল সাম্রাজ্যের ১৯তম এবং শেষ সম্রাট। 
  • তিনি পূর্বসূরি ও তার বাবা মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় আকবরের ২য় সন্তান। 
  • সিপাহী বিপ্লবের শেষে ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ  শাসকেরা তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে ও রেঙ্গুনে নির্বাসনে পাঠায়, এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয়। 
  • আওরঙ্গজেব ছাড়া বাকি সকল সম্রাট ছিলেন ভোগ বিলাসে মত্ত। 
  • তিনি শরিয়া আইনের প্রচলন পুনরায় শুরু করেন। 
  • ফতোয়া-ই-আলমগীরি নামক আইন সংকলন তার সময় প্রণীত হয়। 

সাইয়্যেদ আহমদ বেরলভীর বালাকোট আন্দোলন:
  • ১৮৩১ সালের ৬ মে বালাকোটের প্রান্তরে সাইয়েদ আহমদ বেরলভী  ৭০০ মুসলিম সৈন্য ১০,০০০ জন শিখের বিরূদ্ধে যুদ্ধ করেন
  • যুদ্ধে সাইয়েদ আহমদ বেরলভী ও তার সহযোগী শাহ ইসমাঈল সহ সবাই শাহাদাত বরণ করেন।
  • সেই সময় এমন কোন বট গাছ ছিলনা যেখানে একাধিক আলেমের লাশ ঝুলে থাকত না।
  • ঊনবিংশ শতকের শুরুর দিকে শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভীর জোষ্ঠ সন্তার শাহ আবদুল আজিজ দেহলভী গোটা ভারতকে দারুল হরব ঘোষনা দেন।
  • এটাকে দারুল ইসলাম বানাতে মুসলমানদের আহবান জানান
  • দুই হারামাইনের ঈমাম সহ ভারতের বিচারপতি এ আন্দোলনে সামিল হতো
  • ভারতের হিন্দু মুসলমানের সম্মিলিত আজাদী আন্দোলন যা শুরু হয়েছিল ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবের মধ্য দিয়ে। পূর্ণতা লাভ করেছে ১৯৪৭ সালে হিন্দুস্তানের ভূমি থেকে পরিপূর্ণরূপে  ইংরেজদের বিতারণের মাধ্যমে।

মিশর ও তুরস্কের ইসলামী আন্দোলন:
  • ১৯২৮ সালে ৬ জন ইসলামী ব্যক্তিত্বের সহযোগিতায় হাসান আল বান্না গঠন করেন “ইখওয়ানুল মুসলিমিন” সংগঠনটি আর তিনি সেই সংগঠনের আমির নির্বাচিত হন। 
  • মাত্র ৪৩ বছর বয়সে ১৯৪৯ সালে শাসকশ্রেণীর লেলিয়ে দেওয়া গুন্ডার গুলিতে তিনি শহীদ হন। 
  • সাইয়েদ কুতুব মিশরের ইসলামী আন্দোলনের প্রধান সংগঠন ইখওয়ানুল মুসলিমিন দলের সম্পাদক ছিলেন। 
  • ২৫ আগস্ট ১৯৬৬ সালে তাকে তৎকালীন সরকার ফাঁসির দিয়ে শহীদ করা হয়।
  •  সাঈদ নুরসী একজন সুন্নি মুসলিম ধর্মতাত্ত্বিক। তিনি রিসালায়ে নূর নামক কুরআনের ব্যাখ্যা রচনা করেন। এটির আকার ছয় হাজার পৃষ্ঠার অধিক। 
  • নুরসি একটি বিশ্বাসভিত্তিক আন্দোলনের সূত্রপাত করেন যা তুরস্কে ইসলামের পুনর্জাগরণে ভূমিকা রাখে। 
  • ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের কারণে তাকে তার জীবনের অধিকাংশ সময় বন্দীদশা বা নির্বাসনে কাটাতে হয়।

ভারতীয় উপমহাদেশ তথা বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলন:
  • ভারতীয় উপমহাদেশে তিতুমীর, শরীয়তুল্লাহ, খান জাহান আলী, শাহ জালাল ও শাহ মাখদুমের আন্দোলন উল্লেখযোগ্য।
  • ১৯৩৮ সালে মাওলানা মওদুদী রঃ আল্লামা ইকবালের পরামর্শে পাঠানকোটে দারুল ইসলাম ট্রাস্ট গঠন করেন।
  • ১৯৪১ সালে ‘জামায়াতে ইসলামী’র প্রতিষ্ঠা করেন এবং বলেন ১৮৩১ সালে বালাকোটে ইসলামের যে পতাকা ভুলুন্ঠিত হয়েছে তা আবার হাতে নিলাম।
  • তখন জামায়তের ছাত্রসংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠা হয় ‘ইসলামী জমিয়তে তালাবা’ বাংলাদেশে যার নাম হয় ইসলামী ছাত্রসংঘ।
  • ১৯৭৭ সালে স্বাধীনতা পরবর্তী নিষিদ্ধ হওয়া ছাত্রসংঘের নাম বাদ দিয়ে প্রতিষ্ঠা হয় ইসলামী ছাত্রশিবিরের।
  • যে আন্দোলনে রয়েছে ২৩৪ ভাইয়ের শাহাদাতের নজরানা। অসংখ ভাইয়ের আহত, পঙ্গুত্ব আর কারাবোরূদ্ধ হওয়ার ইতিহাস।
  • বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আছে শীর্ষ নেতৃবৃন্দের ফাঁসি দন্ড বরণের ইতিহাস।

বর্তমানে বিভিন্ন দেশে ইসলামী সংগঠনগুলোর তৎপরতা:
১. জামায়াত ইসলামী নামে সংগঠন রয়েছে- বাংলাদেশ (১৯৪৮), পকিস্তান (১৯৪৭), ভারত (১৯৪১), কাশ্মীর (১৯৫৪), আফগানিস্তান(১৯৭২)। 
২. জামায়াতের আদলে বিভিন্ন নামে সংগঠন আছে- 
Islamic Mission (ইংলান্ড)
Islamic Mission (আফ্রিকা)
ICNA (আমেরিকা)
WAMY (আরব দেশসমূহ)।
৩. Muslim Brotherhood বা ইখওয়ানুল মুসলিমীন নামে সংগঠন আছে- মিশর (১৯২৮)।
৪. ইখওয়ানের আদলে বিভিন্ন নামে সংগঠন আছে- 
বাহরাইন: Al Islah Society (2002) 
ইরান: Call & Reform Organization (1980)
তুরস্ক: মিল্লি গুরুস/রাফা পার্টি (১৯৬৯)
ইরাক: হামাস (১৯২০)
ইসরাঈল: Islamic Mission (১৯৯১)
ফিলিস্তিন: হামাস (১৯৮৭)
জর্ডান: Islamic Action Front (১৯৯২)
কুয়েত: Islamic Constitutional Party [Hadas] (১৯৯১)
সিরিয়া: Muslim Brotherhood (১৯৪৫)
আরব আমিরাত: ‍Al Islah Party (১৯৭৪)
ইয়েমেন: Al Islah Party (১৯৯০)
আলজেরিয়া: Movement of Society for Peace (1990)
লিভিয়া: Homeland Party (২০১১)
মরক্কো: Jastice & Development Party (১৯৬৭)
সুদান: Islamism in Sudan(১৯৪৯)/National Islamic Fornt (১৯৭৬)
তিয়োনেশিয়া: Ennahda Movement (১৯৮১)
ইন্দোনেশিয়া: Prosperous Jastice Party (২০০২)
মালেয়শিয়া: Malaysian Islamic Party (১৯৫৫)
জার্মানি: Islamic Community pf Germany (ICG)
রাশিয়া: The Supreme Military Majlisul Shura
ফ্রান্স: Union Des Organizations Islamiques Er France.



তাকওয়ার আদ্যোপান্ত

 


ভূমিকা:
  • ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের যত প্রশক্ষিণ তার মূল টার্গেট তাকওয়া।
  •  সকল ইবাদতে মৌলিক উদ্দেশ্যও তাই।
  • মানোন্নয়নের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন শুরু হয় (আয়াত-হাদীস মুখস্ত)।
  • তাকওয়া অর্জনের পথে অন্তরায় এমন সামান্য ব্যাপরকেও সংগঠন ছাড় দেয় না (ছাত্রী টিউশনি, নাটক-সিনেমা, জাস্ট ফ্রেন্ড, ছাত্র/ছাত্রী সংগঠনের স্বতন্ত্র ব্যবস্থা)।
  • তাকওয়ার গুণান্বিত ব্যক্তিরাই সংগঠনের আগামীর রাহী, নকীব, রাহবার।
  • তাকওয়া র্অজনের পিছিয়ে পড়া ব্যক্তি প্রতিলকূলতার মোকাবেলায় হাঁফিয়ে উঠে। 
  • দায়িত্বশীলদের মধ্যে যারা লিডারশীপ বাছাইয়ের মানদন্ড হিসেবে তাকওয়াকে গ্রহণ না করে স্বজনপ্রীতিকে গ্রহন করলেন, তিনি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিলেন।


তাকওয়া কি?

  • তাকওয়া (تقوى) অর্থ বিরত থাকা, বেঁচে থাকা, নিষ্কৃতি লাভ করা, ভয় করা, নিজেকে রক্ষা করা। 
  • সর্বাবস্থায় আল্লাহ তা’য়ালাকে ভয় করে হারাম থেকে বেঁচে থাকা এবং তাঁর হুকুম-আহকাম মেনে চলাই হল তাকওয়া। 
  • সকল প্রকার হারাম থেকে নিজেকে রক্ষা করে কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করাকে তাকওয়া বলা হয়।
  • ইবনে আব্বাস রা: এর ভাষায়, "আল্লাহর সাথে শিরক পরিহার করে এবং তাঁর আনুগত্যে কাজ করা।’’
  • "তাকওয়া" শব্দটিوقى  ক্রিয়া থেকে নির্গত, যার অর্থ আত্মরক্ষা, সংরক্ষণ, সুরক্ষা, ঢাল ইত্যাদি।
  • সূরা লাইল এর ৮ নং আয়াত অনুযায়ী, তাকওয়ার বিপরীত হলো ইস্তিগনাহ اسْتِغْنَاء)) যার অর্থ আল্লাহর সীমা থেকে মুক্ত হওয়া, বেপরোয়া আচরণ করা, বাড়াবাড়ি করা, সীমালঙ্ঘন করা, দুঃসাহস দেখানো, দায়িত্ব পালনে অবহেলা করা ইত্যাদি।


তাকওয়ার প্রয়োজনীয়তা:

আল কুরআনের আলোকে:
  • তাকওয়া" শব্দটি কুরআনে ১০০ বারের বেশি ব্যবহৃত হয়েছে। 
  • ‘‘অক্সফোর্ড ডিকশনারি অফ ইসলাম’’ অনুসারে, ‘তাকওয়া’ শব্দটি এবং এর থেকে উৎপন্ন শব্দসমূহ ২৫০ বারের বেশি আছে।
  •  কুরআনুল কারীমের প্রায় ২৭ স্থানে তাকওয়াবান বা মুত্তাকীদের জন্য সুসংবাদ উল্লেখিত হয়েছে। তার মধ্য থেকে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো:
১. তাকওয়া অর্জনকারী হেদায়াত আলোয় আলোকিত:
ذٰلِكَ الۡكِتٰبُ لَا رَیۡبَ ۚ فِیۡهِ هُدًی لِّلۡمُتَّقِیۡنَ
এই সেই কিতাব, যাতে কোন সন্দেহ নেই, মুত্তাকীদের জন্য হিদায়াত (বাকারা:২) 

২. তাকওয়া অর্জনকারী আল্লাহর বাচাইয়ে শ্রেষ্ঠতম:
اِنَّ اَكۡرَمَكُمۡ عِنۡدَ اللّٰهِ اَتۡقٰكُمۡ
তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া সম্পন্ন (হুজুরাত: ১৩)

৩. তাকওয়া অর্জনের তা আবার যাছাই করতে হবে: 
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ حَقَّ تُقٰتِهٖ وَ لَا تَمُوۡتُنَّ اِلَّا وَ اَنۡتُمۡ مُّسۡلِمُوۡنَ
হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যথাযথ ভয়। আর তোমরা মুসলমান হওয়া ছাড়া মারা যেও না। (আলে ইমরান: ১০২)

৪. তাকওয়া অর্জনের জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করতে হবে:
اتَّقُوا اللّٰهَ مَا اسۡتَطَعۡتُمۡ
তোমারা আল্লাহর ভয় (তাকওয়া) অর্জন করো তোেদর সাধ্য অনুযায়ী (তাগাবুন: ১৬)

৫. মুত্তাকীদের লক্ষ্য দুনিয়া নয়; আখিরাত:
قُلۡ مَتَاعُ الدُّنۡیَا قَلِیۡلٌ ۚ وَ الۡاٰخِرَۃُ خَیۡرٌ لِّمَنِ اتَّقٰی
বল, ‘দুনিয়ার সুখ সামান্য। আর যে তাকওয়া অবলম্বন করে তার জন্য আখিরাত উত্তম।’ (নিসা: ৭৭)

৬. মুত্তাকীদের রিজিকের কোন চিন্তা নেই:
وَّ یَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَیۡثُ لَا یَحۡتَسِبُ وَ مَنۡ یَّتَّقِ اللّٰهَ یَجۡعَلۡ لَّهٗ مَخۡرَجًا ۙ﴿۲
যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। (ত্বালাক:২-৩)

৭. তার দুনিয়া ও আখিরাতে পথচলা সহজ হয়ে যাবে:
وَ صَدَّقَ بِالۡحُسۡنٰی ﴿﴾فَسَنُیَسِّرُهٗ لِلۡیُسۡرٰی    ۙ﴿﴾فَاَمَّا مَنۡ اَعۡطٰی وَ اتَّقٰی
যে দান করে, তাকওয়া অবলম্বন করে আর সত্যকে সত্য বলে বিশ্বাস করে। আমি তার জন্য সহজ পথ চলা সুগম করে দেব। (লাইল; ৫-৭)

৮. মুত্তাকীদের জন্য তিনটি মহান পুরষ্কার:
اتَّقُوا اللّٰهَ یَجۡعَلۡ لَّكُمۡ فُرۡقَانًا وَّ یُكَفِّرۡ عَنۡكُمۡ سَیِّاٰتِكُمۡ وَ یَغۡفِرۡ لَكُم
যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তাহলে তিনি তোমাদের জন্য ফুরকান প্রদান করবেন, তোমাদের পাপসমূহ দূর করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। (আনফাল: ২৯)

৯. তারা আল্লাহর রহমাতের ছায়াতলে থাকে:
وَ رَحۡمَتِیۡ وَسِعَتۡ كُلَّ شَیۡءٍ ؕ فَسَاَكۡتُبُهَا لِلَّذِیۡنَ یَتَّقُوۡن
আর আমার রহমত সব বিষয়ে পরিব্যাপ্ত আর তা আমি তাদের জন্য লিখে দিব যারা তাক্বওয়া অবলম্বন করবে (আরাফ: ১৫৬)

১০. আল্লাহ  তাদের বেশি ভালোবাসেন:
وَ اتَّقٰی فَاِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الۡمُتَّقِیۡنَ
তাকওয়া অবলম্বন করে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে ভালবাসেন (আলে ইমরান: ৭৬)

১১. তাদের ভয় ও চিন্তার কোন কারন নেই:
الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ كَانُوۡا یَتَّقُوۡنَ - اَلَاۤ اِنَّ اَوۡلِیَآءَ اللّٰهِ لَا خَوۡفٌ عَلَیۡهِمۡ وَ لَا هُمۡ یَحۡزَنُوۡنَ
জেনে রেখ! আল্লাহর বন্ধুদের কোন ভয় নেই আর তারা দুঃখিতও হবে না। যারা ঈমান আনে আর তাকওয়া অবলম্বন করে (ইউনূস:৬২-৬৩)

১২. তাদের জন্য আসমান জমিনের সকল কল্যাণ উন্মুক্ত হবে:
وَ لَوۡ اَنَّ اَهۡلَ الۡقُرٰۤی اٰمَنُوۡا وَ اتَّقَوۡا لَفَتَحۡنَا عَلَیۡهِمۡ بَرَكٰتٍ مِّنَ السَّمَآءِ وَ الۡاَرۡض
জনপদগুলোর লোকেরা যদি ঈমান আনত আর তাক্বওয়া অবলম্বন করত তাহলে আমি তাদের জন্য আসমান আর যমীনের কল্যাণ উন্মুক্ত করে দিতাম (আরাফ: ৯৬)

১৩. শয়তানের অনিষ্ট থেকে বাঁচতে পারে:
إِنَّ الَّذِينَ اتَّقَوْا إِذَا مَسَّهُمْ طَائِفٌ مِّنَ الشَّيْطَانِ تَذَكَّرُوا فَإِذَا هُم مُّبْصِرُونَ
যাদের মনে ভয় রয়েছে, তাদের উপর শয়তানের আগমন ঘটার সাথে সাথেই তারা সতর্ক হয়ে যায় এবং তখনই তাদের বিবেচনাশক্তি জাগ্রত হয়ে উঠে। (সূরা আরাফঃ ২০১)

১৪. তারা বেহেশতে থাকবে:
إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي مَقَامٍ أَمِينٍ 
নিশ্চয়ই খোদাভীরুরা নিরাপদ স্থানে থাকবে। ( সূরা দুখানঃ ৫১)

১৫. মুত্তাকীদের জন্যই জান্নাত তৈরি করা হয়েছে:
وَسَارِعُوا إِلَىٰ مَغْفِرَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ 
তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও যার সীমানা হচ্ছে আসমান ও যমীন, যা তৈরী করা হয়েছে পরহেযগারদের জন্য। (সূরা আলে ইমরানঃ ১৩৩)

১৬. জান্নাতে তাদের জন্য থাকবে পরিপূর্ণ নেয়ামত:
لِلَّذِينَ اتَّقَوْا عِندَ رَبِّهِمْ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَأَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ وَرِضْوَانٌ مِّنَ اللَّهِ
যারা পরহেযগার, আল্লাহর নিকট তাদের জন্যে রয়েছে বেহেশত, যার তলদেশে প্রস্রবণ প্রবাহিত-তারা সেখানে থাকবে অনন্তকাল। আর রয়েছে পরিচ্ছন্ন সঙ্গিনীগণ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি। (সূরা আলে ইমরানঃ ১৫)

১৭. মুত্তাকীরা হবে জান্নাতের উত্তারাধীকারী:
  تِلۡكَ الۡجَنَّۃُ الَّتِیۡ نُوۡرِثُ مِنۡ عِبَادِنَا مَنۡ كَانَ تَقِیًّا 
 এটা ঐ জান্নাত যার অধিকারী করব আমার বান্দাদের মধ্যে মুত্তাকীদের। (সূরা মরিয়ামঃ ৬৩)

১৮. জান্নাতকে তাদের নিকটবর্তী করা হবে:
وَأُزْلِفَتِ الْجَنَّةُ لِلْمُتَّقِينَ
জান্নাত আল্লাহভীরুদের নিকটবর্তী করা হবে। (সূরা শুয়ারাঃ ৯০)

১৯. আল্লাহ তাদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন:
ثُمَّ نُنَجِّي الَّذِينَ اتَّقَوا وَّنَذَرُ الظَّالِمِينَ فِيهَا جِثِيًّا 
অতঃপর আমি পরহেযগারদেরকে উদ্ধার করব এবং জালেমদেরকে সেখানে নতজানু অবস্থায় ছেড়ে দেব। (সূরা মারইয়ামঃ ৭২)

২০. কেয়ামতের দিন মুত্তাকীরা ছাড়া সকল বন্ধু শত্রুতে পরিণত হবে:
الْأَخِلَّاءُ يَوْمَئِذٍ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ إِلَّا الْمُتَّقِينَ 
বন্ধুবর্গ সেদিন একে অপরের শত্রু হবে, তবে খোদাভীরুরা নয়। ( সূরা যুখরুফঃ ৬৭)

২১. মুত্তাকীদের জন্য জান্নাতে থাকবে চার ধরণের নহর:
مَّثَلُ الْجَنَّةِ الَّتِي وُعِدَ الْمُتَّقُونَ ۖ فِيهَا أَنْهَارٌ مِّن مَّاءٍ غَيْرِ آسِنٍ وَأَنْهَارٌ مِّن لَّبَنٍ لَّمْ يَتَغَيَّرْ طَعْمُهُ وَأَنْهَارٌ مِّنْ خَمْرٍ لَّذَّةٍ لِّلشَّارِبِينَ وَأَنْهَارٌ مِّنْ عَسَلٍ مُّصَفًّى ۖ وَلَهُمْ فِيهَا مِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ وَمَغْفِرَةٌ مِّن رَّبِّهِمْ 
মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের ওয়াদা দেয়া হয়েছে, তার অবস্থা নিম্নরূপঃ তাতে আছে পানির নহর, নির্মল দুধের নহর যারা স্বাদ অপরিবর্তনীয়, পানকারীদের জন্যে সুস্বাদু শরাবের নহর এবং পরিশোধিত মধুর নহর। তথায় তাদের জন্যে আছে রকমারি ফল-মূল ও তাদের পালনকর্তার ক্ষমা। (সূরা মুহাম্মদঃ ১৫)

২২. পার্থিব জগতে আল্লাহর সাথীত্ব অর্জন:
[সূরা হাদীদ: (৪)]
[সূরা মুজাদিলা: (৭)]
[সূরা তাওবা: (৪০)]
[সূরা নাহল: (১২৮)]
[সূরা বাকারা: (১৯৪)]

২৩. শুভ পরিণতি বা শেষ ফল লাভ:
[সূরা ত্বহা: (১৩২)]
[সূরা সাদ: (৪৯)]
[‎সূরা হুদ: (৪৯)]‎


আল হাদিসের আলোকে:

১. নবী করীম (সা.) দোয়া:
তিনি মানুষকে বিদায় দেওয়ার সময় বলতেন,
أَسْتَوْدِعُ اللهَ دِينَكَ وَأَمَانَتَكَ وآخِرَ عَمَلِكَ وَزَوَّدَكَ اللهُ التَّقْوَى وَغَفَرَ ذَنْبَكَ وَيَسَّرَ لَكَ الْخَيْرَ حَيْثُمَا كُنْتَ-
‘আমি তোমার দ্বীন, তোমার আমানত ও তোমার শেষ কর্মকে আল্লাহর নিকট গচ্ছিত রাখলাম। আল্লাহ তোমাকে তাকওয়া দান করুন। আল্লাহ তোমার গোনাহ মাফ করুন এবং আল্লাহ তোমার জন্য কল্যাণকে সহজ করে দিন তুমি যেখানেই থাক’ (আবু দাউদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/২৩২৪)।

২. জান্নাতে প্রবেশের মাধ্যম:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أتَدْرُوْنَ مَا أَكْثَرُ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ الْجَنَّةَ فَقَالَ تَقْوَى اللهِ وَحُسْنُ الْخُلُقِ، أتَدْرُوْنَ مَا أَكْثَرُ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ النَّارَ فَقَالَ الْفَمُ وَالْفَرْجُ-
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন তোমরা কি জান কোন জিনিস মানুষকে সবচেয়ে বেশী জান্নাতে প্রবেশ করায়? তা হচ্ছে আল্লাহর ভয় বা তাক্বওয়া ও উত্তম চরিত্র। তোমরা কি জান মানুষকে সবচেয়ে বেশী জাহান্নামে প্রবেশ করায় কোন জিনিস? একটি মুখমণ্ডল ও অপরটি লজ্জাস্থান’ (তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৬২১)।

৩. ভদ্রতার মাধ্যমে তাকওয়া প্রকাশ পায়:
عَنِ الْحَسَنِ عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدَبٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْحَسَبُ الْمَالُ وَالْكَرَمُ التَّقْوَى-
হাসান বসরী সামুরা ইবনু জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মান-মর্যাদা হল ধন-সম্পদ। আর ভদ্রতা-নম্রতা হল তাক্বওয়া অবলম্বন করা’ (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৪৬৪৮)। 

৪. তাকওয়াবান ছাড়া অন্য কাউকে খাওয়নো নিষেধ:
عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ لاَ تُصَاحِبْ إِلاَّ مُؤْمِنًا وَلاَ يَأْكُلْ طَعَامَكَ إِلاَّ تَقِيٌّ-
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি নবী করীম (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, ‘ঈমানদার ছাড়া কাউকে সাথী কর না। আর পরহেযগার ব্যতীত কেউ যেন তোমার খাদ্য না খায়’ (তিরমিযী, আবু দাউদ, মিশকাত হা/৪৭৯৮)। 

৫. তাকওয়া হলো মর্যাদার মাপকাঠি:
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ أَنْسَابَكُمْ هَذِهِ لَيْسَتْ بِمُسَّبَةٍٍ عَلَى أَحَدٍ كُلُّكُمْ بَنِيْ آدَمَ طَفُّ الصَّاعِ بِالصَّاعِ لَمْ تَمْلَئُوهُ لَيْسَ لِأَحَدٍ فَضْلٌ إِلَّا بِالدِّينِ وَالتَّقْوَى كَفَى بِالرَّجُلِ أَنْ يَكُونَ بَذِيًّا فَاحِشًا بَخِيلاً-
উক্ববা ইবনু আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের বংশ পরিচয় এমন কোন বস্ত্ত নয় যে, তার কারণে তোমরা অন্যকে গালমন্দ করবে। তোমরা সকলেই আদমের সন্তান। দাড়িপাল্লার উভয় দিক যেমন সমান থাকে, যখন তোমরা পূর্ণ করনি। দ্বীন ও তাক্বওয়া ছাড়া একজনের উপর আর একজনের কোন মর্যাদা নেই। তবে কোন ব্যক্তির মন্দ হওয়ার জন্য অশ্লীল বাকচারী ও কৃপণ হওয়াই যথেষ্ট’ (আহমাদ, মিশকাত হা/৪৬৯৩)।

৬. তাকওয়া হলো মর্যাদার মাপকাঠি:
عَنْ أَبِيْ ذَرٍّ قَالَ قَالَ لِيْ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اتَّقِ اللهَ حَيْثُمَا كُنْتَ وَأَتْبِعْ السَّيِّئَةَ الْحَسَنَةَ تَمْحُهَا-
আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে বলেছেন, ‘তুমি যেখানে যেভাবে থাকবে আল্লাহকে ভয় করবে বা তাক্বওয়া অবলম্বন করবে। কোন কারণ বশত পাপ কাজ হয়ে গেলে তারপর ভাল কাজ করবে। তা তোমার পাপকে মিটিয়ে দিবে’ (তিরমিযী, মিশকাত হা/৫০৮৩)

৭. রাসুল নিজে তাকওয়াবান হওয়ার দু’আ করতেন:
عَنْ عَبْدِ اللهِ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ اللهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْهُدَى وَالتُّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى-
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) বলতেন, হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট সহজ-সরল সঠিক পথ চাই। তোমার নিকট পরহেযগারিতা চাই। হারাম হতে বেঁচে থাকতে চাই এবং অন্যের নিকট মুখাপেক্ষী হওয়া হতে বেঁচে থাকতে চাই’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২৩৭০)।

৮. তাকওয়া হলো মর্যাদার মাপকাঠি:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " ثَلَاثٌ مُنْجِيَاتٌ وَثَلَاثٌ مُهْلِكَاتٌ فَأَمَّا الْمُنْجِيَاتُ: فَتَقْوَى اللهِ فِي السِّرِّ والعلانيةِ والقولُ بِالْحَقِّ فِي الرِّضَى وَالسَّخَطِ وَالْقَصْدُ فِي الْغِنَى وَالْفَقْرِ. وَأَمَّا الْمُهْلِكَاتُ: فَهَوًى مُتَّبَعٌ وَشُحٌّ مُطَاعٌ وَإِعْجَابُ الْمَرْءِ بِنَفْسِهِ وَهِيَ أَشَدُّهُنَّ.
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, তিনটি কাজ মানুষকে রক্ষা করে এবং তিনটি কাজ মানুষকে ধ্বংস করে। রক্ষাকারী কাজ তিনটি হচ্ছে- (১) প্রকাশ্যে ও গোপনে আল্লাহকে ভয় করা (২) সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টিতে হক কথা বলা এবং (৩) সচ্ছলতায় ও অসচ্ছলতায় মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা। আর ধ্বংসকারী কাজ তিনটি হচ্ছে- (১) প্রবৃত্তির অনুসরণ করা (২) কৃপণতাকে মেনে নেওয়া এবং (৩) আত্ম-অহংকার করা। আর এটিই হচ্ছে সবচেয়ে কঠিন (বায়হাক্বী, মিশকাত হা/৫১২২)।

তাকওয়ার মৌলিক  বিষয়
তাক্বওয়ার মৌলিক  বিষয় হচ্ছে তিনটি। যথাঃ-
১. শিরক হতে বিরত থাকার মাধ্যমে নির্দিষ্ট শাস্তি হতে আত্নরক্ষা করা।
২. গুনাহ থেকে দূরে থাকা।
৩. এমন কাজ থেকে দূরে থাকা, যা আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফিল করে দেয়।

তাকওয়ার স্তরসমূহ:
ইমাম গাযযালী (রঃ) গুণগত ও মানগত দিক দিয়ে তাক্বওয়াকে চারটি স্তরে বিভক্ত করেছেন। যথাঃ-
১. শরীআত কর্তৃক নির্ধারিত হারাম থেকে বিরত থাকা। এ শ্রেণীর মুত্তাকীকে مؤمن ‘মু’মিন’ বলে।
২. সন্দেহযুক্ত হালাল বস্তু পরিত্যাগ করা। এ শ্রেণীর মুত্তাকীকে صلحا ‘সুলাহা’ বলা হয়।
৩. আল্লাহর ভয়ে অপ্রয়োজনীয় হালাল বস্তু বর্জন করা। এ শ্রেণীর মুত্তাকীকে اتقياء ‘আতক্বিয়া’ বলা হয়।
৪. যে সকল হালাল বস্তু আল্লাহর ইবাদতে সহায়তা করে না তা বর্জন করা। এ শ্রেণীর মুত্তাকীকে صديقين ‘সিদ্দীক্বীন’ বলা হয়।

আল্লামা রাগিব ইস্পাহানী পরহিযগারিতাকে তিনটি স্তরে বিন্যাস করেছেন। যথাঃ-
১। ওয়াজিবঃ সকল প্রকার হারাম থেকে বেঁচে থাকা। এ প্রকারের পরহিযগারিতা অর্জন করা সকল মানুষের উপর ওয়াজিব।
২। মুস্তাহাবঃ সন্দেহপূর্ণ বস্তুসমূহ থেকে বেঁচে থাকা। মধ্যম স্তরের পরহিযগার ব্যক্তিদের জন্য এ স্তরটি প্রযোজ্য।
৩। মাফযূলঃ অনেক মুবাহ এবং স্বল্প প্রয়োজনীয় বস্তু সমূহ থেকেও বিরত থাকা। নবী-রাসূল, শহীদ এবং সালিহ বান্দাদের জন্য এ স্তরটি প্রযোজ্য।’’ 
[আয-যারী’আহ ইলা মাকারিমিশ শারী’আহ, (কায়রো : দারুস সালাম, ২০০৭), পৃ. ২২৭]

তাকওয়ার সর্বোচ্চ স্তর:
আল্লাহ ভীতির সর্বোচ্চ স্তর হল না-জায়েয কাজে জড়িয়ে পরার ভয়ে কোন কোন জায়েয কাজও পরিত্যাগ করা। তাই তো রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: الحَلاَلُ بَيِّنٌ وَالحَرَامُ بَيِّنٌ، وَبَيْنَ ذَلِكَ أُمُورٌ مُشْتَبِهَاتٌ، لاَ يَدْرِي كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ أَمِنَ الحَلاَلِ هِيَ أَمْ مِنَ الحَرَامِ، فَمَنْ تَرَكَهَا اسْتِبْرَاءً لِدِينِهِ وَعِرْضِهِ فَقَدْ سَلِمَ، وَمَنْ وَاقَعَ شَيْئًا مِنْهَا، يُوشِكُ أَنْ يُوَاقِعَ الحَرَامَ (ترمذى
“হালাল সুস্পষ্ট, হারামও সুস্পষ্ট । আর এদুইয়ের মাঝখানে রয়েছে কিছু সন্দেহজনক জিনিস। অধিকাংশ লোকেরা অবগত নয় যে এগুলো হালাল নাকি হারাম। কাজেই যে ব্যক্তি এসব সন্দেহজনক জিনিস থেকে দূরে থাকল, সে তার দ্বীন ও ইজ্জতকে হিফাযত করল। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি সন্দেহজনক বিষয়ে জড়িয়ে পড়ল, সে হারামের মধ্যে ফেঁসে গেল।’’ [তিরমিযীঃ ১২০৫]

তাকওয়ার মূল বৈশিষ্ট্য:
তাক্বওয়ার মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ছয়টি। যথাঃ-
১. تفتيش الحق ‘‘ তাফতীশুল হাক্ব” তথা সত্যের অনুসন্ধান। সত্য উপলব্ধি ও প্রকৃত সত্য প্রাপ্তির জন্য চিন্তা গবেষণা করা।
২.قبول الحق  “সত্য গ্রহণ।” প্রকৃত সত্য সন্ধানের পর সত্যের উপলদ্ধি ও সত্য প্রাপ্তির সাথে নির্দ্বিধায়, নিঃসংকোচে সত্যকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করা।
৩.استقامة علي الحق  “আপোষহীনভাবে সত্যের উপর সুদৃঢ় থাকা।” নিষ্ঠা ও দৃঢ়তার সাথে সত্যকে গ্রহণ করে তার উপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকা। লোভ-লালসা ও সুযোগ সুবিধা ভোগ অথবা অত্যাচার নির্যাতনের কারণে সত্যকে পরিহার না করা।
৪.خوف الهي  “আল্লাহভীতি।” আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের লক্ষ্যে প্রতিমুহুর্তে আল্লাহর নিকট জবাবদিহিতার চেতনায় উদ্ধুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত হয়ে আল্লাহকে ভয় করা।
৫.احساس الذمة  “দায়িত্ব সচেতনতা।” আল্লাহ প্রদত্ত দায়িত্ব সম্পর্কে সদা সচেতন ও সতর্ক থাকা।
৬.اداء الفرائض  “কর্তব্য পালন।” আল্লাহ প্রদত্ত কর্তব্যসমূহ যথাযথভাবে আদায় করা।

তাকওয়া অর্জনের ফলাফল :
১.  আল্লাহর সাহায্য ও নৈকট্য পাওয়া যায়।
২.  শেষ পরিণাম ভালো হয়।
৩.  উত্তম প্রতিদান পাওয়া যায়।
৪.  সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
৫.  দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা অর্জিত হয়।

তাকওয়া অর্জনের উপায়:
১. ওহী-ভিত্তিক জ্ঞান:
এ জ্ঞানে আল্লাহ তা‘আলার পূর্ণ পরিচয় সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। আর তখনই অন্তরে আল্লাহর ভয় জাগ্রত হয়। 
إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاء
“বান্দাদের মধ্য থেকে তারাই আল্লাহ তা‘আলাকে বেশি ভয় করে যারা জ্ঞানী।’’-সূরা ফাতিরঃ ২৮

২. আল্লাহ ভীরুদের সাহচর্য:
মানুষ তার সঙ্গীর আদর্শে প্রভাবিত হয়। কাজেই সহচর্য যদি সৎ ও আল্লাহভীরু হয় তাহলে তার মধ্যে অলক্ষ্যে তাকওয়ার গুণ সৃষ্টি হবে। 
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَكُونُواْ مَعَ الصَّادِقِينَ 
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাও।’’ -সূরা তাওবা- ১১৯

৩. আল্লাহভীরু পিতামাতা:
পিতা মাতা আল্লাহভীরু হলে সন্তানও অধিকাংশ ক্ষেত্রে আল্লাহভীরু হতে বাধ্য। তাই তো রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنهُ كَانَ يحدث قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا مِنْ مَوْلُودٍ إِلَّا يُولَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ أَوْ يُنَصِّرَانِهِ أَوْ يُمَجِّسَانِهِ كَمَا تُنْتَجُ الْبَهِيمَةُ بَهِيمَةً جَمْعَاءَ هَلْ تُحِسُّونَ فِيهَا مِنْ جَدْعَاءَ ثُمَّ يَقُول أَبُو هُرَيْرَة رَضِي الله عَنهُ (فطْرَة الله الَّتِي فطر النَّاس عَلَيْهَا) الْآيَة) مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
“প্রত্যেক সন্তানই ফিতরতের উপর জন্ম গ্রহণ করে। অতঃপর তার পিতামাতা নিজেদের সংস্রব দ্বারা তাকে ইয়াহুদী, খৃষ্টান বা অগ্নি উপাসকে পরিণত করে। যেমন পশুরা পূর্ণাঙ্গ পশু শাবকই প্রসব করে, তাতে তোমরা কোন একটিকেও কান কাটা দেখ কি? (বরং পরে মানুষেই কান কেটে ও নাক ছেদিয়ে সেগুলোকে বিকলাঙ্গ করে দেয়)।’’ -বুখারী; মুসলিম; মিশকাতঃ ৯০

৪. আল্লাহকে কর্মবিধায়ক মনে করা:
وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ 
“তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রেখ তিনি তোমাদের সকল কর্ম সম্পর্কে জ্ঞাত রয়েছেন।’’ -সূরা হাশরঃ ১৮

৫. আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলা (ইবাদত করা):
দৈহিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আল্লাহর আদেশ পালন ও নিষেধাজ্ঞা বর্জনে কাজে লাগাতে পারলে মনে আল্লাহর ভয় জাগ্রত হয়। 
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُواْ رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ – وَالَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
“হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ইবাদত কর, যিনি তোমাদিগকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদিগকে সৃষ্টি করেছেন। তাতে আশা করা যায়, তোমরা পরহিযগারী অর্জন করতে পারবে।’’ -সূরা বাকারাঃ ২১

তাকওয়া অর্জনের কিছু প্র্যাকটিক্যাল কনসেপ্ট:
১. শেষ রাতের তাহাজ্জুদের অভ্যাস করা।
২. দৈনন্দিন প্রতিটি কাজে ব্যবহৃত দু’আ সমূহ পাঠ করা।
৩. অর্থসহ কুরআন তেলাওয়াত করা, তেলাওয়াত শুনা।
৪. প্রতিদিনের বদ অভ্যাসগুলো আত্মসমালোচনার মাধ্যমে চিহ্নিত করে দূর করা।
৫. যে সমস্ত লোকদের সাথে একসাথ হলে গীবত, পরনিন্দা ও খারাপ আলোচনা হতে পারে তাদের এভোয়েট করে চলা।
৬. পোশাক পরিচ্ছদ (চুল, নখ) সুন্নাহ তরীকা অবলম্বন করা।
৭. নিজের সালাত সুন্দর ও ধীর স্থীর করা।
৮. নিজের ব্যক্তিগত আমল যথাসম্ভব গোপনে করা। (নফল রোযা)
৯. মহৎ ও তাকওয়াবান লোকদের জীবনী জানা।
১০. আল্লাহ আযাব ও গযবের ঘটনাগুলো বারবার অধ্যয়ন করা।
১১. চক্ষু ও লজ্জাস্থানের হেফাজত করা।
১২. পারতপক্ষে এক মুহূর্তও একাকী না থাকা।
১৩. মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারে সতর্ক থাকা।
১৪. ভালো কাজের প্রতিযোগীতা করা।
১৫. আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর ভয় করা।

তাকওয়া অর্জনের পথে অন্তরায়:
১. সীরাতের চেয়ে সুরুতের প্রাধান্য দেয়া।
২. নিজেকে যেকোন জায়গায় বড় করে উপস্থাপন।
৩. লোক দেখানো আমল করা।
৪. চোখের হেফাজত/দৃষ্টি সংযত করতে না পারা।
৫. নফসের গোলামী করা।
৬. সময়ের অপচয় করা।
৭. ইবাদতে এখলাস না থাকা।

আমাদের হতে হবে:
১. একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করা।
২. জাহেলিয়াত থেকে পুরোপুরি সম্পর্ক ছিন্ন করা।
৩. নিজেকে ছোট করে উপস্থাপন করা।
৪. বেশি কাঁদা, কম হাসা।
৫. আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করা।





সংগঠন সম্প্রসারন ও মজবুতি অর্জন

 


আমাদের সংগঠন:
  • আমাদের সংগঠন আমাদের আবেগ, আমাদের অনুভূতি।
  • ‘সংগঠন’ শব্দের সাথে আমাদের পরিচয় জড়িত।
  • মল্লিক ভাইয়ের ভাষায়, ‘সংগঠন না থাকতো যদি; মুক্তি পেতাম না...’
  • এই একদল মানুষকে কেউ যেনো বুঝতে পারে না।
  • ইবনে মাজাহ’র ৩৯৮৬ নং হাদিসে আছে-
  •     بدأ الإسلام غريبًا، وسيعود غريبًا كما بدأ، فَطُوبي للغرباء
  • ‘কি করিস কোথায় থাকিস বুঝিনে কারবার...’-কবি মতিউর রহমান মল্লিক
  • সংগঠন আদর্শ মানুষ তৈরির কারিগর (পরিবার থেকে যা আমরা পাইনি)
  • আর তা-ই সংগঠন আমাদের কাছে সবচেয়ে আস্থার জায়গা (সকল গোপনীয়তা এখানে স্পষ্ট)
  • সংগঠন আমাদের সময়মত পাশে দাঁড়ানোর অভিভাবকের নাম (সকল আনুষ্ঠানিকতার সঙ্গী)
  • সংগঠন আমাদের নৈতিকতার রক্ষাকবজ (ভুঁই যদি পড়ে থাকে আবাদ না হয়...)
  • সংগঠন জবাবদিহি অনুভুতি ও সংশোধনের সমন্বয়ক (পরামর্শ ও এহতেসাব মাধ্যমে)
  • সংগঠন আমাদের সুন্দর আগামীর স্বপ্নদ্রষ্টা (দ্বীন কায়েমের এক পরিপূর্ণ মডেল দেয়ার মাধ্যমে)
  • সংগঠনই হাজার হাজার স্কুল/কলেজের ছাত্রের হাতে কুরআন তুলে দিয়েছে 
  • সংগঠনের পরিচয় সম্পর্কে অধ্যাপক মফিজুর রহমানের বক্তব্য (সালাতের জবাবদিহিতা....)

প্রথমে মজবুতি নিয়ে কথা বলি...
  • কারণ সংগঠন সম্প্রসারণের আগে প্রতিষ্ঠিত সংগঠন মজবুত করা জরুরি।
  • শুধু সম্প্রসারণের দিকে নজর দিলে অফিসিয়ালি সংগঠনের কাঠামো সংখ্যাতাত্তি¡কভাবে বাড়বে।
  • কিন্তু বাস্তবে সংগঠনের অগ্রগতিতে কোন ভূমিকা রাখতে পারবে না।

মজবুতি কি?
  • মজবুতি মানে টেকসই/স্থায়ীত্ব সম্পন্ন/Sustainable
  • সুরা সফের ভাষায়-‘কাআন্নাহুম বুনিয়ানুম মারসুস’
  • এটি স্বচালিত/স্বয়ংক্রিয়; যার গতির জন্য ধাক্কা দেয়া লাগেনা।
  • যার গতিপথ রূদ্ধ হলে নতুন এরচেয়ে বেশি গতি নিয়ে নতুন পথ আবিষ্কৃত হয়।

সংগঠন মজবুতিকরণে করণীয়:
  • সাংগঠনিক এরিয়া নিরূপন ও তদানুযায়ী পরিকল্পনা ।
  • একটি যথাযথ সেটআপ ও টিম স্পিড।
  • সকল জনশক্তিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করা।
  • যোগ্যতার মাপকাঠিতে দায়িত্বের তারতম্য।
  • যেকোন মূল্যে গৃহিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন।
  • উর্ধ্বতনের নির্দেশনার পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ।
  • কিছু শাখাকে স্পেশাল তত্ত্ববাধান করা।
  • সকল অধঃস্তন থেকে সমান আউটপুট প্রত্যাশা না করা।
  • তত্ত্বাবধায়কদের তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করা।
  • দায়িত্বশীলদের কখনোই ক্লান্ত মানসিকতা না থাকা।
  • সমস্যাগ্রস্থ জনশক্তিদের বিষয়ে সীদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব না করা।
  • মূল দায়িত্বশীলরা ব্যক্তিগত কাজে বেশি ব্যস্ত না থাকা।
  • একদল ম্যাচিউর জনশক্তি তৈরি করা।
  • সময়োপযোগী ও ক্রিয়েটিভ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন।
  • মানোন্নয়নের ধারাবাহিকতা ঠিক রাখা।
  • প্রশিক্ষণমূলক প্রোগ্রাম হক আদায় করে করা।
  • অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে মূল দায়িত্বশীলের উদ্যোগ গ্রহণ।
  • দায়িত্বশীলের কষ্ট-সহিষ্ণুতা ও সাদাসিদা জীবনযাপন।
  • স্থানীয় জনশক্তি বৃদ্ধি ও বেইজ এরিয়াকে বিশেষ গুরত্বারোপ।
  • মজবুতির পথে অন্তরায়/চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করা।

সংগঠন মজবুতিকরণে চ্যালেঞ্জ:
  • অপরিকল্পিত সম্প্রসারণ।
  • কোন এক সেশনে মানোন্নয়নের ধারা ব্যহত হওয়া।
  • জনশক্তিদের যথাযথ কাজে লাগাতে না পারা।
  • দায়িত্বশীলদের চেইন না থাকা।
  • অভ্যন্তরীণ পরিবেশ ঠিক না থাকা।
  • প্রশিক্ষণকে শুধু আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হওয়া।
  • আনুগত্যহীনতা
  • গীবত চর্চা
  • পরামর্শ না থাকা
  • এহতেসাব না থাকা
  • অর্থনৈতিক সংকট
  • জ্ঞানের স্বল্পতা
  • মেধাবীদের সংকট

সংগঠন সম্প্রসারণ কি?
  • সম্প্রসারণ মানে বিস্তৃতি/চড়িয়ে দেয়া/Expansion
  • শাখার অথীনে থানা ও বিভাগ সম্প্রসারণ
  • থানার অধীনে ওয়ার্ড, ওয়ার্ডের অধীনে উপশাখা, উপশাখার অধীনে সমর্থক সংগঠন সম্প্রসারণ।
  • সংগঠন সম্প্রসারনের উদ্দেশ্য প্রত্যেক পাড়া মহল্লায় সংগঠনকে বিস্তত করা।

সংগঠন সম্প্রসারণে প্রয়োজণীয় শর্ত:
  • পরিকল্পনা ও যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ।
  • নীতি নির্ধারণ বৈঠকে সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেয়া।
  • সংগঠন সম্প্রসারণে সম্ভাবনা ও সুযোগগুলো বিশ্লেষণ।
  • সম্প্রসারণের আগে ভাবতে হবে সেটা ধরে রাখা যাবে কিনা
  • সম্প্রসারণের আগের ও পরের আউটপুট নিয়ে চিন্তা করা।

সংগঠন সম্প্রসারণের জন্য করণীয়:
  • সেশনের শুরুতে এ সম্পর্কিত একটি মনিটরিং সেল গঠন করা।
  • গুরত্বপূর্ণ এলাকা বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নেয়া।
  • যে শাখা থেকে সম্প্রসারণ করা হবে তাদের আগেই জানিয়ে দিয়ে কাজের টার্গেট দিয়ে দেয়া।
  • প্রতি ২-৩ মাস অন্তর কাজের পর্যালোচনা করা।
  • সংশ্লিষ্ট শাখার পরিসংখ্যানমূলক তথ্য যাছাই করা।
  • আগামী কয়েক বছরের লিডারশীপ ক্রাইসিস হবে কিনা তা বিশ্লেষণ করা।
  • শাখার পরিধি ও অর্থনৈতিক অবস্থা ঠিক থাকবে কিনা যাছাই করা।
  • একটি শাখা থেকে আরেকটি সম্প্রসারণ করতে গেলে দুটোই যেনো সমতার ভিত্তিতে হয়।
সংগঠন সম্প্রসারণে সতর্কতা:
  • উর্ধ্বতনের প্রত্যাশা পূরণে সক্ষমতা থাকবে কিনা আগেই ভাবা।
  • সম্প্রসারণের পর যেনো আবার ঘাটতি না হয়ে যায়।
  • শুধু পরিকল্পনা বাস্তবায়নের তাগিদে সম্প্রসারণ না করা
  • এক বছরের কাজের উপর সম্প্রসারণের চিন্তা না করা।
  • সম্প্রসারণের পর বিশেষ তদারকি ও সাপোর্ট প্রদান।

পরিশেষ:
  • আমাদের সংগঠন আমাদের কাছে আমানত
  •  এর অগ্রগতি ও অবনতি আমাদের উপর নির্ভর করে।
  •  হঠাৎ আবেগ তাড়িত সিদ্ধান্ত যতে সংগঠনকে পিছিয়ে না দেয়।
  •  আমাদের উদ্যোগের অভাবে সংগঠন যাতে থেমে না থাকে।
  •  শহীদের রক্তরাঙা সংগঠনকে লক্ষ্যপাণে নিয়ে যেতে আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো উচিৎ... 

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দাওয়াতি কাজের কৌশল

✔ মুখবন্ধ:

- শিবিরের ৫ দফার কর্মসূচির প্রথম ৩ দফা হচ্ছে স্থায়ী, তার একটি হলো দাওয়াত। 

- দাওয়াত তো জিহাদের ৫টি পর্যায়ের ১ম ধাপ

- জিহাদ সম্পর্কে রাসুলে আরাবি সা. ফরমান, 'আল জিহাদু মাজিন ইলা ইয়াওমিল কিয়ামাহ' [জিহাদ চলবে কিয়ামত পর্যন্ত]

- তার মান পৃথিবী যতদিন আছে, দাওয়াত ইলাল্লাহ ততদিন থাকবে। 

- মাওলানা মওদুদী বলেন, 'দ্বীন কো জিন্দা রাখনা কিলিয়ে দো চীজ আশাদ্দ জরুরত হ্যায়, জিহাদ আওর ইসতেহাদ'

- দ্বীনকে বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত করতে অনুকূল পরিবেশে দাওয়াত জারি রাখা প্রয়োজন। 

- কারন রাসুলুল্লাহ'র মিশন তো হচ্ছে, লি ইউজহিরাহু (লি ইউগলিবাহু) আলাদ দ্বীনি কুল্লিহি [সকল মতামর্শের উপর ইসলামকে বিজয়ী করা]

- আল্লামা ইকবাল বলেন, 'মাগরিব মে ওয়াজিয়ু মে গুঞ্জে আজা হামারে, তাম থা নাতা কিসিসে সইলে রুয়া হামারা'

- মাওলানা খুব চমৎকার বলেছেন, 'আমাদের গঠনমূলক কাজ ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি৷  আমরা দাওয়াত সম্প্রসারণ না করি এবং গণভিত্তি অর্জন না করি'

- বর্তমান প্রেক্ষাপটে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির একটি আলোচিত সংগঠনের নাম

- আমাদেরকে অনেকেই এখন জানতে চায় এবং জানার পর পজেটিভ রিভিউ দিতে বাধ্য।

- এই পরিস্থিতিতে আমাদের দাওয়াতকে প্রতিটি মানুষর কর্ণকুহরে পৌঁছে দিতে হবে।

- আর এক্ষেত্রে অনুসরণ করতে হবে আল্লাহর রাসুলের দাওয়াত পদ্ধতি ও কর্মকৌশল। 


দাওয়াতের কিছু স্থায়ী কর্মনীতিঃ

যা আলোচিত হয়েছে সুরা মুদ্দাসসিরে-


ক) সতর্কতার সাথে কৌশলী হয়ে কথা বলা [কুম ফাআনজিন]

>ফিরআউনকে দাওয়াত দিতে আল্লাহ বললেন- 'ও কুলালাহু কাওলান লাইয়িনা' [নরম ভাষায় কথা বলবে]


খ) কেবল আল্লাহর দাসত্ব কবুলের দিকে ডাকা [রব্বাকা ফাকাব্বির]

>দলের দিকে, দলীয় প্রধান(পীর) এর দিকে নয়

>কবি বলেন, 'নিসলে হুজ্জাত কাওলে ফে'লে হিজে পীর, ক্বওলে তায়ালা ফে'লে আহমদ রহবগীর'

>জামায়াতে দাওয়াতের ৩দফার ১মটি হলো আল্লাহর দাসত্ব (গঠনতন্ত্র/দাওয়াত ও কর্মনীতি বইয়েও তা আছে)


গ) স্বচ্ছতা, সুন্দরতম উপায়ে ও প্রস্তুতিসহ নিজেদের উপস্থাপন [সিয়াবাকা ফাতাহহির]

>'৭১ ইস্যু, মওদুদীবাদ, রগ কাটা ইত্যাদি প্রশ্নের Loud and Clear জবাব দেয়া

>আমাদের সাহিত্যগুলোতে তার উত্তর আছে

>দাঁড়ি, পাঞ্জাবি পড়ার অভ্যাস করা

>কুরআন, হাদিসের কোটেশন দিয়ে দাওয়াত দেয়া (ওমান দা'আ ইলাইহি উদইয়া ইলা সিরাতিম মুসতাকিম)

>এখনো যারা পায়নি দাওয়াত/কুরআনের এই মিছিলের/শুনিয়ে দিই চলো সত্য বাণী/পথ বাতলে দিই আমলের।


ঘ) জাহেলিয়াত, শির্ক, বিদায়াত, কুফর ও অন্যকে বিদ্রুপ করে না বলা [লা তামনুন তাসতাকসির]

>সত্যের সাক্ষ্য বইয়ে কাজের তিনটি পথের কথা বলা হয়েছে।

>কথা কাজের গরমিল পরিহার করা

>জাহেলিয়াত থেকে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করা

>নিজেকে সহীহ প্রমাণ করতে অন্য ভুল প্রমাণের চেষ্টা করা

>ফতোয়া দিয়ে উম্মাহ'র মাঝে বিভক্তি শুধু বাড়াও/নিজেকে ভাবো হক বাকিরা ভুল এই নীতিটা ছড়াও

>নিজেদেরকে নির্ভুল করার মত ভুল আমি আমার জীবনে করিনি (মওদুদী)


ঙ) অতিরিক্ত কনফিডেন্ট না হয়ে এবং বাছাই করে দাওয়াত দেয়া [রুজজা ফাহজুর]

>এখন অনেক মুনাফিক সুবিধা পাওযার জন্য আসতে চাইবে।

>আমাদের ব্যপারে অতিরিক্ত স্যাটিসফেকশন বা হতাশা না থাকা।

>পরিবারের, আত্মীয় সবাই এই আদর্শ গ্রহণ করবে এমনও মনে করার কারন নেই।

>এই পরিস্থিতিতে সবাই আমাদের হয়ে যাবে এইটাও ভাবা ঠিক হবে না।


চ) ধৈর্য, বিচক্ষণতা, প্রজ্ঞা ও মেজাজের ভারসাম্য রেখে আহবান [লি রাব্বিকা ফাসবির]

>ধৈর্য্য যেকোন আন্দোলনের দাহ্য পদার্থ আর ধৈর্যহীনতা আন্দোলনের ভিজা লাড়কি।

>ধৈর্য্য ধারন করতে হবে আইয়ুব ও ইয়াকুব আ. এর মতো।

>অনেকে আমাদের তাচ্ছিল্য করে কথা বলে থাকেন (ইদানিং কিছু ছাত্র সংগঠনের ভূমিকা)

>আমাদের গোপন থাকা নিয়ে ঢাবি সেক্রেটারির প্রজ্ঞার সাথে জবাব।

>আমাদের কঠিন সময়ে অন্যান্য দলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নে আমীরে জামায়াতের কৌশলী উত্তর। [রাগ নেই, প্রত্যাশা ছিল। সব প্রত্যাশা পূরণ হয়না]

>ধৈর্যহারা হলে হতাশা সৃষ্টি হয় (যে কর্মী মানে নাকো হতাশা/দূরে ঠেলে নিরাশার কুয়াশা)


পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দাওয়াতি কাজের কিছু কৌশলঃ


১. মসজিদকে টার্গেট করে দাওয়াতঃ

- নবী সা. সেপ্টেম্বরের ১২ তারিখ দিবাগত রাত ৬২২, ১ম হিজরীর সফরের ২৭ তারিখ হিজরতের জন্য রওনা হন।

- মাঝখানে কুবায় ছিলেন, সেখানে মসজিদ স্থাপন করেন।

- মদিনায় পৌঁছান ২৭ সেপ্টেম্বর, ১২ রবিউল আউয়াল।

-আবার মদিনায় গিয়েও মসজিদ স্থাপন করলেন।

-মসজিদ হলো সভ্যতার ভিত্তি, জ্ঞান চর্চার কেন্দ্র। 


২. স্বল্প মেয়াদী কার্যকরী প্লান করাঃ

-এর আগে মদিনার নাম ছিল ইয়াসরিব ( মান ক্বলা ইয়াসরিব ফাল ইয়াস তাগফিরুল্লাহ) (বিপ্লব পরবর্তী নাম পরিবর্তন)

- সেখান থেকে মক্কা বিজয় পর্যন্ত সময়:

৮ বছর বলেছেন ঈমাম বুখারীর মতে

৭ বছর বলেছেন ইবনে হাজারের মতে

৭ বছর ৩ মাস ১৭ দিন অন্যান্যদের মতে

-অল্প সময়ে মক্কা বিজয় হয়েছে (এক্ষেত্রে হুদাইবিয়ার সন্ধি খুবই কার্যকরী ছিল)


৩. সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেয়াঃ

- মাদিনী জীবনকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়:

১. হিজরত থেকে ৬ষ্ঠ হিজরীর জিলক্বদ মাস পর্যন্ত ৫০টি যুদ্ধ সংগঠিত হয়।

২৷ জিলক্বদ থেকে মক্কা বিজয় থেকে  ১২ টি যুদ্ধ হয়।

৩. মক্কা বিজয় থেকে ওফাত পর্যন্ত আরো অনেকগুলো ছোট গাযওয়া ও সারিয়া সংগঠিত হয়।

- তিনি মোট যুদ্ধ করেছেন সর্বোচ্চ ৯০টি, সর্বনিম্ন ৬৮টি। (আনা নবীয়ুল মোলাহয়েম)

- বর্তমান সময়ের উপযোগী প্লান (সায়েন্স ফেস্ট, কমার্স কার্নিভাল, অধম্য মেধাবী সংবর্ধনা)


৪. পরিকল্পিত স্থান/এলাকা নির্ধারনঃ

- রাসুল হিজরতের জন্য আবিসিনিয়া, ইথোপিয়া, তায়েফকে বাছাই করতে চেয়েছিলেন। 

- কিন্তু আল্লাহ মদিনাকে বাছাই করেছেন।

- মদিনা রাষ্ট্রটি হচ্ছে একদিকে ঘন পাহাড়, একদিকে খেজুর বাগান, আরেকদিকে হাররা বা আগ্নেয় লাভা, শুধু একদিক খোলা।

- বিপ্লবের জন্য এরকম ভৌলিক এরিয়া দরকার।

- আগেরদিনের রাজা বাদশারা এরকম স্থানে রাজধানী করতেন।

- আমাদের বেইজ এরিয়া, সাংগঠনিক অফিস ঠিক করা।


৫. বিভাগভিত্তিক ব্যক্তি সিলেকশন/সেটআপঃ

- আবু যর গিফারীর মত অর্থনীতিবিদ (তার অর্থনৈতিক তত্ত্ব দেখে কাল মার্কস বলল, এটা আগে পেলে পুঁজিবাদের জন্ম দেয়া লাগতো না। অথচ এর আগে আবু যর ছিলেন ডাকাত)

- আবু হুরাইরার মত হাদিস বিশারদ (যাকে রাইসুল মুহাদ্দিসীন বলে)

- উবাই ইবনে কাবের মত কুরআনের বিশেষজ্ঞ (রাসুল কাব রা. কে তার পিছনে নামাজ দাঁড় করাতেন)

-তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের গবেষক আবদুল্লাহ বিন সালেম, সালমান ফারসীর মত মানুষ (যার জন্য জান্নাত অপেক্ষা করছে) 

- এর আগে গোটা আরবে শিক্ষিত মানুষ ছিল ১৭ জন।

- নবীজী যখন বিদায় নেন তখন শিক্ষিত লোক ছিল ১,২০,০০০ জন।

- সেক্টর ভিত্তিক লোক তৈরি, তৈরিকৃতদের বলয়ে আনা।


৬. মেধা/যোগ্যতার প্রয়োরিটিঃ

- মদিনার প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী যুবক ছিলেন সুয়াইদ বিন ছামিত। তিনি ছিলেন একাধারে একজন মেধাবী কবি, দক্ষ ঘোড় সওয়ার ও বীর যোদ্ধা।

- দ্বিতীয় যে যুবক ইসলামের দাওয়াতে প্রভাবিত হন, তাঁর নাম আয়াস বিন মু’য়ায। এই ব্যক্তি মদীনার একটি প্রতিনিধি দলের সদস্য ছিলেন।

- মদিনা সনদের মাধ্যমে তিনি সকল দল, মত, ধর্ম নির্বিশেষে সকলের সহাবস্থান নিশ্চিত করেছেন। ভেঙে দিয়েছেন একদলীয় শাসনের ভিত্তি।

- হুদাইবিয়ার সন্ধির মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী এলাকা বা রাষ্ট্রের সাথে নিজ স্বার্থ অক্ষুন্ন রেখে সু-সম্পর্ক বজায় রেখেছেন।


৭. অসাধারণ ব্যক্তিত্বের পরিচয় দেয়াঃ

- রাসুলে কারীম সা. তার অসাধারণ ব্যক্তিত্ব দিয়ে দাওয়াতকে সম্প্রসারণ করেছেন।

- রাসুল সা. বলতেন আল্লাহ আমাকে ৬টি ব্যতিক্রম জিনিস দান করছেন। এর একটা হলো 'ও মুসিরতু বির রওফ' (অসাধারণ ব্যক্তিত্ব)

- যার কারনে শত অপপ্রচার শুনেও মানুষগুলো ইসলামের দিকে দীক্ষিত হয়েছে। 

- পথের মাঝে তার কাঁটা বিচিয়ে দিতে যে মহিলা, তার অসুস্থতায় তাকে সেবা করতে হাজির হয়েছেন।

- মক্কা বিজয়ের দিন জনৈক বুড়ির জিনিসপত্র বহন করে পথচলায় সহযোগিতা করেছেন।


৮. রাজনৈতিক কৌশলে বিজয়ী হওয়াঃ

- যুদ্ধভিযানগুলোতে রণকৌশল ও গোয়েন্দা তথ্যের সহযোগিতা নিয়ে পৃথিবীর সুপার পাওয়ার পরাশক্তিগুলোর মোকাবেলা করে বিজয়ী হয়েছে।

- হারেস ইবনে উমাইয়ারকে দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন রোমান সম্রাটের কাছে দাওয়াত কবুল করার জন্য (শুরু হলো তাবুক, মুতা)

- আবার যুদ্ধবন্দিদের গোলামি জিন্দেগীর সময়ে তাদের দিয়ে শিক্ষাদান করাতেন, সামন্য কিছু অর্থ নিয়ে আযাদ করে দিতেন, বৈবাহিক বন্ধনের মাধ্যমে গোত্রের সাথে আত্মীয়তা করতেন।


৯. নিবিঢ় সম্পর্ক/সহচর্য স্থাপন করাঃ

- তার ব্যক্তিত্বে এতো সুক্ষ চমৎকার বিষয় উপস্থিত ছিল যে, নবুয়্যাতের দায়িত্ব পালনে সদা ব্যস্ত থাকা নবীজী ছোট্ট শিশুটির কথা ভুলে যাননি।

- সেই ছোট্ট সাহাবীকে দেখে জিজ্ঞেস করছেন, 'ইয়া উমায়ের! মা ফালান নুগায়ের'

- ঠিক তেমনি বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে এতোটা বিশ্বস্ততা অর্জন করছেন যে, হিজরতের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা আবু বকর রাতের পর রাত দরজার পাশে নির্ঘুম কাটিয়ে দিয়েছেন।

- মেরাজে খবর শুনে আবু বকর বলছেন, 'লাও ক্বলা মুহাম্মাদ আসমায়ু তাহতানা ওল আরদি ফাওকানা লা সদাকা মুহাম্মাদ'

- আলী রা. কে জীবন উৎসর্গের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, 'ইয়া রাসুলাল্লাহ! আলীর কাছে তো একটাই জীবন আছে, যদি ১০০ টা জীবন থাকতো সবগুলোই মুহাম্মদের নামে কুরবান করে দিতাম'


১০. ধনী-গরীবের ভেদাভেদ না করাঃ

-  সমাজ পরিচালনায় রাসুলুল্লাহ সা. দূর করেছেন আউস-খাদরাজের মত সকল গোত্রীয় বৈষম্য (তোমার আগমনে মুক্তি পেল আউস...)

- এই ব্যাপারে তিনি বলেছেন, 'লা ফাজলা লি আরাবিয়িন আলা আজমি...'

- এতো আন্দোলনের পর আজও ইউরোপ আমেরিকাতে বর্ণবাদ দূর হয়নি।

- পশ্তাচিমাদের দেশে পাশাপাশি দুইটা টয়লেটে লেখা থাকে: 1.Only for White, 2.For Black and dog of white


১১. বিচার ও দায়িত্বের ক্ষেত্রে ইনসাফঃ

- বিচার পরিচালনায় তিনি স্বজনপ্রীতিকে স্থান দেননি। তাইতো আরবের সম্রান্ত মহিলার চুরির ঘটনায় হাত কাটার নির্দেশ নিয়েছেন অকপটে।

- সাহাবীরা ঐ মহিলার শাস্তি কমানোর সুপারিশ করলে রাসুল বলেন, 'আমার মেয়ে ফাতিমা এই কাজ করলে তার জন্যও একই সিদ্ধান্ত হতো'

- আবার মুসলিম-ইহুদির ঝগড়া মিমাংসায় ইহুদির পক্ষে রায় দিয়েছেন। যেই ব্যাপারে কুরআনের সুরা নিসার ৬৫নং আয়াত নাযিল হয়েছে।

- মক্কা বিজয়ের পর ক্ষমার অনুপম দৃষ্টান্ত দেখিয়ে মানুষের দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করার সুযোগ করে দিয়েছেন।

- এজন্য তার ব্যাপারে দার্শনিক বসওয়াত বলেছেন, Mohammad is wonder to me

- Historian Givon বলেছেন, He bring one of the most memorable revulsions which impressed a new and lasting character on the nations of th globe.


১২. জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সকলের অধিকারের পক্ষা অবলম্বনঃ

- বিদায় হজ্জের ভাষনে ঘোষনা করছেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের রোডম্যাপ।

- তিনি বলেছেন, ধর্ম নিয়ে জোরাজুরি করবে না, মনিব-গোলামের তারতম্য করবে না, একজনের রক্ত অন্যজনের জন্য হারাম করছেন।

- জামায়াতের নারী অধিকার, বাঙালি সংস্কৃতি নিয়ে অবস্থান পরিবর্তন 

- একান্তর টিভির সাংবাদিক জাহানারার জামায়াত সম্পর্কে মন্তব্য।


১৩. ইসলাম-ই বর্তমানে মানবতার সমাধান এ কথা জাতির সামন উপস্থাপনঃ

- আজ বর্তমান পৃথিবীর সকল সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ মুহাম্মদ সা. এর কাছে রয়েছে। এই কথা অমুসলিম দার্শনিকরা স্বীকার করেছেন।

- এ ব্যাপারে দার্শনিক জর্জ বার্নারড'শ বলেন, 'If man like Mohammad were assum to the dictatorship of the modern world, He would secceed in solving all it's problems ib a way that would bring so much needed peace and happiness.'

- তাইতো ব্রিটিশ মিউজিয়াম এই কথার স্বীকারোক্তি হিসেবে প্রবেশপথে লিখে রেখেছে, 'As a father, as a teacher, as law giver, as law maker, as a reformer of the society Mohammad is the supper man in the world.'


সর্বশেষ পোস্ট

যুগে যুগে ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাস

ভূমিকা: ইসলামী আন্দোলন শুধু যুগ যুগ ধরে নয়। এ আন্দোলন শতাব্দী থেকে শতাব্দী ধরে। এ আন্দোলন হাজার বছরের আন্দোলন। ঈসা আঃ এর আগমনের প্রায় ৬০০ বছ...

জনপ্রিয় পোস্ট